দুই চোরের পুরানো মজার গল্প । ঠাকুমার ঝুলি । পর্ব ১
দুই চোরের মজার গল্প
এক গ্রামে দুই চোরের বাস ছিল। গ্রামের লোকেরা তাদের মোটেই 'বিশ্বাস করত না। এমনই তাদের বদনাম ছিল, শৈশব থেকেই তাদের চুরির অভ্যাস ছিল। এখন তো ওই চুরি করেই সংসার চালায়। গ্রামে কোনও চুরি হলেই তাদের ডাক পড়ত, এবং তাদের আড়ং ধোলাই হত। একদিন এক চোর আর এক চোরকে মনের দুঃখে বলছে, 'ভায়া এই চুরি করতে আর ভাল লাগে না, গ্রামের সবাই জেনে গেছে, চুরি মানেই
আমাদের দু'জনের কুকীর্তি।' অন্য চোর বিমর্ষ কণ্ঠে বলল, 'আমিও এ-কথা ভাবছিলাম, চুরি করে ধরা পড়ে যাই, তবে অমন চুরি করে লাভ কী বলো??
একটা কথা বলব ভায়া?'
'কী কথা?'
'ভাবছি আমরা আর চুরি করব না, এ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যাব, সেখানে গিয়ে সৎপথে কাজ করে সংসার চালাব।'
এক চোরেরর কথায় অন্য চোর সায় দিয়ে বলল, ' সেটাই ভাল। চলো আমরা অন্য কোনও গ্রামে চলে যাই।'
সেদিন রাতেই দুই চোর গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে গেল। পরদিন সকালে দুই চোর কাজের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে লাগল। এক সময় হাজির হল এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে। লোকের মুখে শুনল ওই ব্রাহ্মণ নাকি দু’জন কাজের লোক খুঁজছে।
দুই চোর ব্রাহ্মণের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে হাতজোড় করে বলল, 'শুনলাম আপনার দু’জন কাজের লোক দরকার? যদি আমাদের নেন!
দু’জন তাগড়াই শক্ত সমর্থ লোককে দেখে ব্রাহ্মণের পছন্দ হল। বলল, ‘তোমরা যদি কাজ করতে চাও আমার কোনও আপত্তি নেই। আমার কাজও খুব একটা বেশি নয়, একজনকে আমার বাগানের চাপাগাছে প্রতিদিন জল দিতে হবে। যতক্ষণ গাছের গোড়ায় জল না জমবে ততক্ষণ জল দিয়ে যেতে হবে। আর অন্যজনকে আমার গোরু নিয়ে মাঠে চরাতে হবে।'
দুই চোর ব্রাহ্মণের প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হয়ে গেল। পরদিন সকালে একজন গাছের গোড়ায় জল দিতে লাগল, অন্যজন গোরু নিয়ে চলে গেল মাঠে। যে চোর গাছের গোড়ায় জল দিচ্ছিল, সে ভেবেছিল দুই-তিন বালতি জল দিলেই গাছের গোড়ায় জল জমে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, বালতির পর বালতি জল দিয়ে চলেছে তো দিয়েই চলেছে, অথচ গাছের গোড়ায় জল জামার কোনও লক্ষণ নেই। এইভাবে সারাদিন জল দিয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, এ কেমন জায়গা? বালতির পর বালতি জল দিয়ে গেলাম, কিন্তু গাছের গোড়া দেখে মনে হচ্ছে এক বালতিও জল পড়েনি। জল দিতে দিতে অবশেষে সে দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। হাত-পা যন্ত্রণায় অবশ হয়ে আসছে, সে তখন বালতি রেখে ঘরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল।
এদিকে অন্য চোরটি গরু নিয়ে মাঠে ছেড়ে দিল, ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোরু তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে আরম্ভ করল, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করল। চোর ভেবেছিল গোরুকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে গাছের নীচে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু এমন বদমাশ গরু নিয়ে এসেছে যে, ঘুম তো দূরের কথা, ওই পাজি গরুর পেছনে পেছনে তাকে ছুটতে হল । একবার এই খেতে, কারও ফুলের বাগানে, অথবা কারও বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করতে লাগল। যার জিনিস নষ্ট করেছে সে ওই চোরকে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ তো করছেই, পাশাপাশি উত্তরমধ্যমও পিঠে পড়ছে। এক সময় সে ক্লান্ত হয়ে মাঠে বসে কাঁদতে লাগল। তখন একপাল রাখাল ছেলে চোর মুখে তার দুঃখের কথা শুনে, তারা গরুটাকে ধরে দিল, চোর তখন গরুর দড়ি শক্ত হাতে ধরে বিকেল বিকেল বাড়িতে ফিরে এল।
রাতের খাবার শেষ করে দুই চোর পাশাপাশি বসল। এক চোর অন্য চোরকে জিজ্ঞেস করল, তা কেমন লাগছে নতুন কাজ?' যে চোর সারাদিন জল দিয়েও গাছের গোড়ায় জল জমাতে পারেনি
সে বলল, ‘সত্যি ভাই এত দিনে একটা মনের মতো কাজ পেলাম, মাত্র এক বালতি জল দিতেই গাছের গোড়ায় জল জমে গেল ৷ ব্যস আমার কাজ খতম, বাকি সময় ঘরে আরাম রে শুয়ে-বসে কাটিয়ে দিলাম। তা তোমার গরু চরানোর কাজ কেমন লাগল?”
যে চোরটি গোরু চরাতে মাঠে গিয়েছিল, সে মনে মনে ভাবল, এখন যদি সত্যি কথা বলি তবে কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে, তার চাইতে মিথ্যা কথা বলাই ভার, শাস্ত্রে আছে অপ্রিয় সত্যি বলা উচিত নয় সে তখন বলল, ‘গোরু নিয়ে মাঠে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি গাছতলায় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম, বিকেল থাকতে থাকতে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমার গা ঘেঁষে চুপটি করে বসে আছে গরু, পাশের জলাশয়ে হাত-মুখ ধুয়ে গোরু নিয়ে ফিরে এলাম।' যে চোরটি গাছের গোড়ায় জল দেয় সেই চোরটি অন্য চোরকে বলল, 'ভাই, এতদিনে তাহলে ঈশ্বর আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন, আমরা দু'জনেই এখন তাহলে সুখী হলাম, কি বল? তোমার কাজটা আমার কাজের তুলনায় অনেক শক্ত, কতটা পথ হেঁটে......
দুই চোরের পুরানো মজার গল্প । ঠাকুমার ঝুলি । পর্ব ২
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ