দুই চোরের পুরানো মজার গল্প । ঠাকুমার ঝুলি । শেষ পর্ব

ধারণ করেছে, তারা তখন ইষ্টনাম জপ করতে করতে ভূত ভেবে সােনাদানা ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে লাগল। 

ডাকাত দলের কাণ্ডকারখানা দেখে দুই বন্ধু একচোট হেসে নিয়ে ছােট চোর বড় চোরকে বলল, 'কী, এবার বুঝতে পারছ, আমিও কম যাই না! 

তখন দুই বন্ধুতে মিঠে ঠিক করল, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন ডাকাতি করা সােনাদানা মণি-মুক্তো যা কিছু আছে দু’জনে সমান ভাগে ভাগ করে নেবে। এই ভেবে দুই বন্ধু ডাকাতির সব জিনিস দুভাগে ভাগ করে যে যার গৃহে ফিরে গেল, এবং পরম সুখে দিন কাটাতে লাগল।  ক্রমে ক্রমে বড় এবং ছােট চোরের একটি করে পুত্রসন্তান হল, দুই বন্ধু মিলে তাদের নাম রাখল যথাক্রমে বড় চোরের ছেলের নাম রাম আর ছােট চোরের ছেলের নাম শ্যাম। ধীরে ধীরে রাম আর শ্যাম বড় হচ্ছে। | একদিন রামের বাবা শ্যামের বাবাকে বলল, বন্ধু, অসৎ পথ ত্যাগ করে সৎ পথে যাওয়ায় আমাদের কী

শিক্ষনীয় মজার গল্প,রোমান্টিক হাসির গল্প,শিক্ষনীয় হাসির গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,ছোটদের মজার রূপকথার গল্প,মজার হাসির গল্প,একটা খুব সুন্দর গল্প,ভালোবাসার ফানি গল্প,শিক্ষনীয় মজার গল্প,শিক্ষণীয় মজার গল্প,হাস্যকর মজার গল্প,পুরানো মজার গল্প,দারুন মজার গল্প,মজার হাসির গল্প,মজার ছোট গল্প,মজার গল্প পড়ব,

হালটাই না হয়েছিল! তাই ভাবছি ছেলেদের সৎ পথে রাখব না, চুরি বিদ্যেতে আমাদের মতাে পারদর্শী করে তুলল। শ্যামের বাবা সম্মতি জানিয়ে বলল, তাই ভাল বন্ধু, আমি শুনেছি গায়ে নাকি একজন চুরিবিদ্যা শেখাবার পণ্ডিত এসেছে। - রামের বাবা বলল, “হ্যা, কাল সকালে ছেলে দুটোকে নিয়ে ওই পণ্ডিতের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। 

পরদিন সকালে ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে বড় আর ছােট চোর সেই পণ্ডিতের স্কুলে হাজির হয়ে বলল, “পণ্ডিতমশাই, আমাদের দুটো ছেলেকে আপনার স্কুলে ভর্তি করে নিন, এদের চুরিবিদ্যায় পারদর্শী করে তুলুন। 

রাম আর শ্যাম নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল। পণ্ডিতের স্কুলে অনেক ছাত্র ছিল, তাদের সঙ্গে রাম এবং শ্যামের ভাব হয়ে গেল। তারা মন দিয়ে চুরিবিদ্যা শিখতে লাগল। এইভাবে কয়েকটি বছর কাটল, তারপর পণ্ডিত একদিন সমস্ত ছাত্রদের একসঙ্গে করে বলল, “শােনাে বালকেরা, চুরিবিদ্যায় পারদর্শী করে তােলার জন্য যে যে গােপন বিদ্যা আমার জানা ছিল, সেসব আমি তােমাদের শিখিয়ে দিয়েছি। আজ পরীক্ষা করে দেখতে চাই আমার পরিশ্রম কতটা সার্থক হয়েছে। আমাদের গায়ের উত্তরদিকে আছে বামুনপাড়া। সেই পাড়ায় এক বৃদ্ধ নাপিত বাস করে, নাপিতের  কুঁড়েঘরের চাল থেকে একটা মস্তবড় কুমড়াে চুরি করে যে আমার হাতে তুলে দিতে পারবে তাকে আমি সর্বাপেক্ষা কৃতী ছাত্র হিসেবে পুরস্কৃত করব। আর একটা কথা শুনে রাখাে, ওই কুঁড়েঘরের চাল কিন্তু নড়বড়ে যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে, নাপিতের হাঁপানি রােগ আছে। ফলে রাতের বেশিরভাগ সময় সে জেগে থাকে। এসব কথা শােনার পর এবার তােমরা কে কে চুরি করতে রাজি আছ বলাে! 

পণ্ডিতমশাই কথা শেষ করে এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল, কিন্তু কারও মুখে সাড়া নেই। এমন সময় বড় চোরের ছেলে রাম হাত তুলে দাঁড়িয়ে বলল, ‘পণ্ডিতমশাই, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি, তবে আমাকে একটা দশ হাত লম্বা দড়ি, একটা বেড়াল আর ধারালাে একটা ছুরি দিতে হবে। ২ পি এ পণ্ডিতমশাই রামের কথা মেনে নিয়ে সব জিনিসের ব্যবস্থা করে নিল । ও সেদিন মাঝরাতে রাম জিনিসপত্র নিয়ে সন্তর্পণে উপস্থিত হল বামু নপাড়ায়। কুঁড়েঘরের বেড়ায় কান রেখে শােনার চেষ্টা করল ভেতরের লােক জেগে আছে না ঘুমিয়ে পড়েছে। ভেতরে কোনও সাড়া-শব্দ নেই। তার মানে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পা টিপে টিপে গিরগিটির মতাে রাম কুঁড়েঘরের চালে উঠে পড়ল, চালটা একেবারে জরাজীর্ণ, ফলে এক জায়গায় পা ফেলতেই মচমচ আওয়াজ হল, এবং রাম শুনতে পেল নাপিতের বউ নাপিতকে ডেকে বলছে, তুমি একবার বাইরে বেরিয়ে দেখাে না গাে, মনে হচ্ছে চালে চোর উঠেছে। এ-কথা শােনামাত্রই রাম বেড়ালের মাথায় আঘাত করল, বেড়াল ম্যাও ম্যাও বলে দু’বার ডেকে উঠল। তখন বৃদ্ধ নাপিত স্ত্রীকে বলল, ঘুমের সময় কী ডাকাডাকি করছ, চালে বিড়াল উঠেছে। রাম ধারালাে ছুরি দিয়ে মস্তবড় কুমড়ােটা কেটে নিল, নামার সময় হল বিপত্তি। আবার চাল নড়ে উঠল, নাপিতের বউ স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ওগাে তুমি একবার বাইরে গিয়ে দেখনই না, আমার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি চোর উঠেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাম বিড়ালটাকে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলল, ফলে যন্ত্রণায় বিড়ালটি বেশ কয়েকবার ম্যাও ম্যাও বলে ডেকে উঠল, তখন আবার বৃদ্ধ নাপিত বউকে বিরক্ত হয়ে বলল, সারাদিন পর রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাের, তােমাদের  জ্বালায় তাও পারব না, কানে কালা নাকি? শুনছ না বিড়ালে বিড়ালে মারপিট হচ্ছে। আবার সব চুপ, রাম হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, কুমড়াে নিয়ে 

পণ্ডিত মশায়ের কাছে হাজির হল। 

কুমড়াে দেখে পণ্ডিতমশাই খুব খুশি। পরদিন পাঠশালা শুরু হলে পণ্ডিতমশাই সকল ছাত্রদের সামনে বলল, আজ আমার শিক্ষাদান সার্থক। রাম এই স্কুলের সেরা ছাত্র।' সেদিন পণ্ডিতমশাই রামের বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে বলল, “আপনার সন্তানের শিক্ষা সম্পূর্ণ। রাম এখন চুরিবিদ্যায় পারদর্শী। আপনি তাকে নিয়ে যেতে পারেন।' 

বড় চোর ছেলেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে মনে মনে ভাবল, একটা সামান্য ছেলেকে কুমড়াে শ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি রাম চুরি বিদ্যা ভাল করে রপ্ত করেছে? বড় চোর তার ছেলে রামকে ডেকে বলল, “দেখাে একটা সামান্য কুমড়াে চুরি করাতে তুমি চুরিবিদ্যা কেমন রপ্ত করেছ তার প্রমাণ পাওয়া যায় না, তুমি যদি রানিমার গলার চৌদ্দ ভরি সােনার হার এনে আমার হাতে দিতে পারাে তবেই বুঝব সত্যি-সত্যিই তুমি চুরিবিদ্যা শিখেছ।' 

রাম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, এ আর এমন কী শক্ত কাজ, আমি সাতদিনের মধ্যে রানিমার গলার হার তােমার হাতে তুলে দেব।' | বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাম রাজবাড়ির চার দিকে ঘুরে দেখতে লাগল। এইভাবে প্রায় চারদিন কেটে গেল, রাম খবর নিয়ে জানল, রানিমা তিন তলায় থাকেন, তাঁর কাছে পৌছতে গেলে একটা সিংহদরজা এবং দুটো সাধারণ দরজা ডিঙিয়ে যেতে হবে। প্রতি দরজায় আবার দশজন সৈনিক পালা পরে পাহারা দেয়। প্রয়ােজনীয় সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে রাম ষষ্ঠ দিনের দিন রাতে একখানা কালাে কাপড়, পঞ্চাশটা বড় বড় গজাল আর একটা হাতুড়ি নিয়ে রাজবাড়ির সামনে এল। সিংহদরজার পাশে বটবৃক্ষের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখল। ঠিক আটটার সময় সৈনিকদের বিদায় নেয়, নতুন দশজন সৈনিক সেই শূন্যস্থান পূরণ করে। এই সময়ের অপেক্ষায় ছিল রাম, পরিবর্তন হওয়ার সময়টুকুর মধ্যে সন্ত পণে সিংহদরজা পেরিয়ে রাজবাড়ির অন্দরে ঢুকে গেল। এভাবে প্রতিটি দরজার পাহারা পরিবর্তন করে রাম নীচের তলায় এসে দাঁড়াল। এবার সমস্যা হল তিনতলায় উঠবে কী করে? পেছনদিকে কোনও সিঁড়ি নেই, গজাল পুঁতে ওপরে যাওয়া যায় ঠিকই তবে গজাল পোঁতার শব্দে প্ল্যান বানচাল হয়ে যাবে। রাম অপেক্ষা করতে লাগল কখন ঘড়িতে দশটা বাজবে। দশটা বাজলেই রাজবাড়ির পেটা ঘড়িতে ঢং ডং শব্দ হয়, সেই শব্দকে কাজে লাগাতে হবে। দশটা বাজার দু’মিনিট আগে থেকে রাম হাতুড়ি আর গজাল নিয়ে তৈরি হয়ে নিল। যখনই রাজবাড়ির ঘড়িতে দশটা বাজার ঢং ঢং শব্দ হতে লাগল সেই শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ৈ রাম একের পর এক গজাল পুঁতে চলল। এইভাবে সে দোতলায় উঠে এল। আবার রাত এগারােটায় ঘড়ির শব্দের জন্য দোতলার এককোণে অপেক্ষা করতে লাগল। পরিকল্পনা মতাে ঠিক রাত এগারােটায় রাম পৌছে গেল। তিনতলায়। রানিমার ঘরের কাচের জানলা দিয়ে দেখল, রানিমা স্বর্ণখতিচ 


পালঙ্কে শুয়ে আছেন, আর পাশে বসে তার বিশ্বস্ত পরিচারিকা গল্প বলছে। এখন তাে ভেতরে প্রবেশ করা যায় না, রাম দজার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। এইভাবে আরও এক ঘণ্টা কেটে গেল, তখন বাজে বারােটা, রাম দেখল রানিমা ঘুমিয়ে পড়েছেন আর তার দাসী ঘুমের ঘােরে বিড়বিড় করছে। এই সুযােগে রাম ধীরে পায়ে রানিমার ঘরে প্রবেশ করে, তরােয়ালের এক কোপে দাসীর মাথা নামিয়ে দেয়, তারপর দাসীর কাপড় নিজে পরে রানিমার পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে। আধঘণ্টা বাদে যখন রাম বুঝতে পারল রানিমা গভীর নিদ্রায় মগ্ন, তখন সন্তর্পণে রানিমার গলার হার খুলে নিল, হার নিয়ে সে সঙ্গে সঙ্গে নেমে এল না, সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। যখন প্রায় ভাের ভাের তখন রাম দাসীর ছদ্মবেশে দরজায় পাহারারত সৈনিকদের বলল, দরজা খুলে দাও, আমি বাইরে যাব।' | সৈনিকরা রানিমার খাস দাসী ভেবে দরজা খুলে দিল। বুদ্ধিমান রাম রাজবাড়ির সব দরজা এইভাবে অতিক্রম করে বাড়িতে ফিরে এল। বাবার হাতে রানিমার সােনার হার তুলে দিয়ে বলল, “কী দেখছ তাে, শিক্ষায় আমার কোনও ফাঁকি ছিল না। 

ছেলে যে পাকা চোর হয়ে উঠেছে তা বুঝতে আর বাকি রইল না বড় চোরের। পুত্রকে বুকে টেনে বলল, “এতদিনে আমার স্বপ্ন সফল হয়েছে, এখন আর আমার মরতে আফসােস নেই, তুমি স্বাবলম্বী হয়ে গেছ। | এদিকে সকালবেলা রানিমার ঘুম ভাঙলে, এক ঘর রক্তের মধ্যে তাঁর। বিস্বস্ত দাসীকে মুণ্ডহীন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে তিনি চিল্কার করে ওঠেন। মহারাজ পাশের ঘরে ঘুমােচ্ছিলেন, রানিমার চিৎকারে চোখ বড় বড় হয়ে গেল, পালঙ্কের কাছে যেতেই মহারাজের নজর পড়ল রানিমার গলায় হার নেই, সঙ্গে সঙ্গে মহারাজ রানিমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তােমার গলার হার কোথায় গেল? 

‘হার!' এই বলে রানিমা গলায় হাত দিয়েই চিৎকার করে ওঠেন, ‘সত্যিই তাে, হারটা গেল কোথায়? আমি তাে হার পরেই ঘুমিয়েছিলাম। 

মহারাজ ব্যাপারটা বুঝতে পরলেন, সমস্ত সৈনিকদের ডেকে পাঠালেন, তারা বলল, “ভােরবেলা রানিমার দাসী প্রতিদিনের মতাে যথারীতি বেরিয়ে 


গেছে।' | মহারাজ চিন্তায় পড়ে গেলেন, কার এমন দুঃসাহস, তার রাজ্যে চুরি করে? একেবারে খােদ রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে চুরি? না, এর একটা বিহিত করতেই হবে, যেভাবেই হােক চোরকে ধরতেই হবে। এই ভেবে মহারাজ প্রধানমন্ত্রীকে আদেশ দিলেন, এই মুহূর্তে যেন রাজ্যের প্রতিটি আনাচে-কানাচে তেঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ব্যক্তি রানিমার গলার হার-চোরকে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে পঁচিশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। কারণ 

একদিন দু’দিন করে সাত-সাতটি দিন কেটে গেল। চোর আর ধরা পড়ে না, মহারাজ মনে মনে ফন্দি আঁটতে লাগলেন কীভাবে চোরকে ধরা যায়! দশদিন পর আবার তেঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দিলেন আগামীকাল থেকে বেশ কয়েকদিন এক ব্যক্তি একটি উঠের পিঠে দুই বস্তা মােহর নিয়ে রাজ্যের পাশেপাশে ঘুরে বেড়াবে, যদি সেই মােহরের বস্তা কেউ চুরি করে নিতে পারে, তবে বুঝব সেই ব্যক্তি রানির হার চুরির চাইতেও বাহাদুর। 

রাম এই খবর শুনে মনে মনে বলল, “মহারাজ তােমার মজা দেখাচ্ছি! এইভাবে কেটে গেল আরও তিনটে দিন। প্রতিদিন সকালে মহারাজের উট দুই বস্তা মােহর নিয়ে রাজ্যের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। চতুর্থ দিন রাম এক সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে পথের ধারে। আগুন জ্বালিয়ে বাঘের ছালের ওপর ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে। সন্ন্যাসীর মাথায় জটা, গলায় একশত একটা রুদ্রাক্ষের মালা। বুক পর্যন্ত সাদা দাড়ি। তাকে আসল সন্ন্যাসী বলেই মনে হচ্ছে। | এমন সময় দুই বস্তা, মােহার নিয়ে উট ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। একজন সন্ন্যাসীকে রাস্তার পাশে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখে। কৌতূহলী উটসওয়ার সন্ন্যাসীর কাছে এগিয়ে গেল। 

ছদ্মবেশী রাম উটসওয়ারকে দেখতে পেয়ে আধবােজা অবস্থায় গম্ভীর গলায় বলল, “ওহে উঠসওয়ার বৃথা কেন হন্যে হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছ? কার এতবড় সাহস আছে যে, প্রকাশ্যে মহারাজের উট থেকে দুই বস্তা মােহর চুরি করবে? আমার পাশে এসে বােসসা, একটু বিশ্রাম করাে তামাক খাও। 

উটচালক সন্নাসীর চেহারায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সন্ন্যাসীর অনুরােধ ফেলতে পারল না। মনে মনে ভাবল, একটু তামাক খেলে কী আর এমন হবে? উঠ আর মেহার তাে আমার চোখের সামনেই রইল।' এই ভেবে উটসওয়ার ছদ্মবেশী রামের পাশে বসে পড়ল, রাম উঠসওয়ারের হাতে তামাক এগিয়ে দিল, ছদ্মবেশী রাম তামাকের সঙ্গে এমন এক নেশায় ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল যে, কয়েকটা টান দেওয়ার পরই উটচালক অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে রাম উটচালকের পােশাক নিজে পরে উঠ আর দুই বস্তা মােহর নিয়ে নিজের বাড়িতে হাজির হল। রাতারাতি রাম 

উটটাকে দু'টুকরাে করে বাড়ির উঠোনের মাটিচাপা দিয়ে দিল। 

পরদিন সকালে মহারাজের লােক গিয়ে দেখল পথের ধারে উটচালাক সন্ন্যাসীর পােশাকে ঘুমিয়ে আছে, আর আশেপাশে উট বা মােহরের বস্তার কোন চিহ্নও নেই। এই অশুভ সংবাদ পাওয়ামাত্র মহারাজ অত্যন্ত রেগে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে ঘােষণা করলেন, যে ব্যক্তি ওই চোরকে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে পঞ্চাশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে।' | ছােট চোরের ছেলে শ্যামের খুব হিংসে ছিল রামের ওপর। হিংসে থাকারই কথা! রাম সারাদিন কোনও কাজ করে না, রাত-বিরেতে চুরিচামারি করে আজ বড়লােক, আর শ্যাম সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে অতিকষ্টে সংসার চালায়। শ্যাম মনে মনে ভাবল, রামকে যদি একবার ধরিয়ে দেওয়া যায় তবে সেও বিশাল বড়লােক হয়ে যাবে। পঞ্চাশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা মুখের কথা? মনে মনে শ্যাম ফন্দি আঁটতে লাগল, কীভাবে রামকে ধরিয়ে দেওয়া যায়! | একদিন গভীর রাতে সে বুঝতে পারে রাম বাড়িতে নেই, সঙ্গে সঙ্গে শ্যাম মেয়ের ছদ্মবেশ ধারণ করে রামের বাড়ির দরজায় আঘাত করে। রামের বউ জেগেই ছিল, কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেল ক্রন্দনরত এক মহিলাকে। রামের বউ জিজ্ঞেস করল, কী গাে বাছা, তুমি অমন করে কাঁদছ কেন? | ছদ্মবেশী শ্যাম আরও জোরে কান্নার ভান করে বলল, “দিদি, আমার একটাই মাত্র সন্তান, কঠিন রােগে আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তার বলেছে যদি উটের মাংস রান্না করে খাওয়াতে পারি তবেই সুস্থ হয়ে উঠবে। শুনলাম তােমাদের বাড়িতে নাকি উঠের মাংস আছে, যদি আমাকে একটু দাও বড় উপকার হয়, একটা ছেলে প্রাণে বেঁচে যায়। 

রামের বউ বলল, না গাে বাছা, আমরা উটের মাংস পাব কোথায়? তুমি বরং রাজার কাছে যাও, তাঁর উঠশালায় অনেক উট আছে। তিনি তােমাকে দিতে পারবেন। | ছদ্মবেশী শ্যাম কি এই কথায় ভােলার পাত্র? সে তখন রামের বউয়ের পা জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদতে লাগল, “দিদি, তুমি আমায় ফিরিয়ে দিও না, শেষ বয়সে ভগবানের অসীম কৃপায় একটামাত্র সন্তান। 

পেয়েছি, একে হারালে আমি কী নিয়ে বাঁচব? 

কি | রামের বউয়ের মনে দয়া হল, সে বলল, “ঠিক আছে, তুমি এখানে অপেক্ষা করাে, আমি দেখছি কী করা যায়!' এই বলে রামের বউ বাড়ির ভেতরে চলে গেল। উঠোনের মাঝখানে যেখানে মহারাজের উটটাকে দু'টুকরাে করে পুঁতে রেখেছিল, গর্ত খুঁড়ে সেখান থেকে কিছুটা মাংস এনে ছদ্মবেশী শ্যামের হাতে দিল। 

উটের মাংস দেখে শ্যাম বুঝল, নিঃসন্দেহ হল যে, মহারাজের উট ও মােহর চুরি রামেরই কাজ।।


পরদিন সকালে শ্যাম মহারাজের দরবারে হাজির হয়ে বলল, “মহারাজ, যে ব্যাক্তি রানিমার হার এবং আপনার উটসহ মােহর চুরি করেছে তাকে আমি ভালভাবেই জানি, শুধু জানি বললে ভুল হবে মহারাজ, সে আমার বাড়ির কাছেই থাকে। আপনি আমার সঙ্গে পঞ্চাশজন সেপাই পাঠিয়ে দিন, আমি চোরকে ধরে দিচ্ছি।' | 

মহারাজ সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশজন সেপাই শ্যামের সঙ্গে পাঠালেন। শ্যাম রামের বাড়িতে পৌছে দেখিয়ে দিল কোথায় উট মেরে পুঁতে রেখেছে। সেপাইরা উঠোনে গর্ত খুঁড়ে উটের মৃতদেহ তুলল, “রামের বাড়ির আনাচে কানাচে তল্লাশি করে প্রচুর সােনাদানা মণি-মুক্তো পেল। তখন সেপাইরা রামকে বন্দি করে সমস্ত রত্ন নিয়ে মহারাজের দরবারে উপস্থিত হল। - 

মহারাজ আসল অপরাধীকে পেয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘এতবড় সাহস, আমার রাজ্যে বাস করে চুরি করা? এই কে আছ, এক্ষুনি একে শূলে চড়াও। 

রাম তখন সেপাইদের হেফাজতে বন্দি হয়ে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, মহারাজ, এবারের মতাে আমায় ক্ষমা করে দিন, চোর তাে শুধু আমি একা নই, যে আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে সেও তাে চোর। | এ-কথা শুনে শ্যাম জোড়হাত করে বলল, মহারাজ, রামের মতাে আমিও চুরিবিদ্যা শিখতে গিয়েছিলাম ঠিকই, তবে আমি কখনও ওই বিদ্যাকে পেশা হিসেবে নিইনি। | উপস্থিত সভাসা শ্যামের কথায় সম্মতি জানাল, মহারাজ তখন রামের প্রাণদণ্ডের হুকুম দিলেন আর শ্যামকে পঞ্চাশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিদায় করলেন। 


সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ