কুরআন সৃষ্টিতত্ত্ব বিগ-ব্যাগ পিডিএফ বই ডাউনলোড করুন
বইয়ের নামঃ কুরআন সৃষ্টিতত্ত্ব বিগ-ব্যাগ
বইয়ের পৃষ্টাঃ ৩২৩
সাইজঃ ২২এমবি
লেখকের কথা
আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে হাজারো প্রতিকূলতার সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে ডিঙ্গিয়ে 'আল-কুরআন' দ্যা ট্রু সাইন্স' গ্রন্থটি সিরিজ আকারে পর পর বহু খণ্ডে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করলো। এতে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। সকল কৃতিত্ব ও প্রশংসা মহাবিজ্ঞানময় মহাবিশ্বের একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ই ।
'আল-কুরআন' আল্লাহর বাণী। যার মাঝে মানবজীবনের দিক নির্দেশনা, মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা'আলার অফুরন্ত নিয়ামত, ফিরিশ্তাকুল ও জ্বীন সম্প্রদায়ের আলোচনা, যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের আগমনের ইতিহাসসহ বিভিন্ন জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়েছে। উল্লিখিত আলোচনার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক তথ্যের অবতারণা করে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও তার ধ্বংস, চন্দ্র সূর্যের সৃষ্টি ও তাদের পরিণতি, দিন-রাত্রির পরিবর্তন, ঋতুর পরিবর্তন, জীবন, উদ্ভিদ এবং মানুষের সৃষ্টি রহস্য ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক তথ্য পেশ করে মানব জাতিকে তার সত্যতা প্রমাণ করে দেখার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। সাথে সাথে মহাবিশ্বের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী অদৃশ্য সেই মহান সত্তা, প্রচণ্ড ক্ষমতা ও মহাজ্ঞানের অধিকারী ‘আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনকে' দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে মেনে নেয়ার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এমন সব বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে যেন পৃথিবী নামক গ্রন্থটি চূড়ান্ত ধ্বংস হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মানব সমাজের হাজারো প্রশ্নের প্রকৃত সমাধান খুব সহজে চোখের সামনেই পেয়ে যেতে পারে।
‘আল্লাহ্ পাক' জানেন যে, সময়ের বিবর্তনে এই মাটির পৃথিবী এমন এক পর্যায় অতিক্রম করবে, যখন বিজ্ঞান চরম উৎকর্ষতা লাভ করবে। উন্নত এ সময়ে মানুষ প্রত্যেকটি বিষয়কে সরাসরি বিজ্ঞানের অর্জিত সাফল্যের নিক্তিতে পরিমাপ করে তবেই তা গ্রহণ করবে অথবা বর্জন করবে। সম্ভবত এ কারণেই (আল্লাহ্ ভালো জানেন) তিনি কুরআনে বৈজ্ঞানিক মৌলিক তথ্য ও প্রস্তাবসমূহ জুড়ে দিয়েছেন, যেন বিজ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত মানুষের বিবেক পবিত্র 'কুরআনকে' বাস্তবতার আলোকে যাচাই বাছাই করে এর সত্যতাকে নিরেট 'সত্য' হিসেবে গ্রহণ করে ধন্য হতে পারে। তা না হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানহীন পরিবেশে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে যখন ‘কুরআন' নাযিল হচ্ছিল, তখন মানবমণ্ডলী জ্ঞানের এমন এক নিম্নতম স্তরে অবস্থান করছিল যে, তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান রাখতো না এবং এমন কোনো আগ্রহই পোষণ করতো না যা দিয়ে তারা পরখ করতে পারতো যে, 'আল-কুরআন' সত্যিই মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সত্য সঠিক গ্রন্থ । বস্তুতঃ 'আল-কুরআন' হচ্ছে এক মহাসত্য গ্রন্থ, আর 'বিজ্ঞান' হচ্ছে সেই মহাসত্যকে বাস্তবে প্রমাণিত করার টুলস্' বা 'মাধ্যম মাত্র'। 'কুরআন' হচ্ছে টাকার প্রধান পিঠ এবং 'বিজ্ঞান' হচ্ছে টাকার দ্বিতীয় পিঠ। কাউকে অস্বীকার করা যায় না।
একজন বিশ্বাসী 'বিজ্ঞান' নামের যেকোনো তথ্যকেই প্রকৃত সত্য হিসেবে মেনে নিতে এগিয়ে যায়। তার কাছে বৈজ্ঞানিক তথ্যকে পরখ করে দেখার কোনো মানদণ্ড নেই। ফলে পরবর্তীতে বাস্তবতার আলোকে যখন বৈজ্ঞানিক তথ্যের' পরিবর্তন ঘটে তখন ঐ অবিশ্বাসীকেও তার অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু একজন বিশ্বাসী যে কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারমূলক তথ্যকে 'আল-কুরআনের' আলোকে পরখ করে মিলিয়ে দেখে। যখন তা 'কুরআনের' সাথে সাংঘর্ষিক না হয়ে বরং কুরআনের সাথে একাত্ম হয়ে যায়, কেবল তখনই বিজ্ঞানের উদ্ঘাটনকৃত ঐ সত্য তথ্যকে গ্রহণ করে, নতুবা নয়। এক্ষেত্রে 'আল-কুরআন' মানদণ্ডের কারণ হলো- 'কুরআনের' অবস্থান বর্তমান বিজ্ঞানের অনেক অগ্রে, বর্তমান বিজ্ঞানের প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে 'আল-কুরআন' দুনিয়ার মানুষের সামনে আগমন করেছে এবং বিজ্ঞানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাপ্ত তথ্য একাধিকবার তার অবস্থান পরিবর্তন করলেও 'আল-কুরআনের' বিষয়তো দূরের কথা, একটি শব্দ এমনকি একটি অক্ষরও বিগত ১৪০০ বছর থেকে সম্পূর্ণরূপে অপরিবর্তিত রয়েছে। গোটা বিশ্ববাসীর জ্ঞান রাজ্যের সম্মুখে ভরা দুপুরের সূর্যের ন্যায় ঝলমল্ করে তাদেরকে 'মহাসত্যের প্রতি আনুগত্যের আহ্বান জানাচ্ছে। এর কারণ মহাগ্রন্থ 'আল-কুরআন' নাযিল হয়েছে সকল জ্ঞানের উৎস এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের অধিকারী মহান সত্তা বিশ্বপ্রভু আল্লাহ্ রাব্বুল আ'লামীনের পক্ষ থেকে। অপরদিকে বিজ্ঞান নামক তথ্যসমূহ আগমন করছে অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের অধিকারী মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে, আর সেজন্যই ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য বা থিউরিকে' সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়।
বিজ্ঞান বিগত কয়েক শতাব্দী থেকে এই মহাবিশ্বের অসংখ্য বিষয়ে নিত্য-নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতার প্রভূত কল্যাণ সাধন করতে সক্ষম হয়েছে, তবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মানব সভ্যতার মাঝে জ্ঞানের ধারক ও চিন্তাশীল সমাজই বিভ্রান্ত হয়েছেন বেশি। তারা স্বল্প সময়ে বিজ্ঞানের বদৌলতে এই মহাবিশ্বের অগণিত বিষয়ে এত বেশি তথ্য লাভ করেছেন যে, বেশি প্রাপ্তির ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ যাঁর অদৃশ্য সৃষ্টি নৈপুণ্যতায় প্রতিমুহূর্তে যথাযথভাবে সম্পাদিত হচ্ছে, তাঁকেই ভুলে গিয়ে তদস্থলে ‘বিজ্ঞানকে’ বসিয়ে দিয়েছেন এবং জ্ঞানের চক্ষুকে আপাততঃ বন্ধ রেখে বিফল ও ব্যর্থ আত্মতৃপ্তির স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
আমাদের সমাজের উল্লিখিত শ্রেণীর সম্মানিত জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাশীলগণের দৃষ্টির সম্মুখে বর্তমান বিজ্ঞানের অতি মূল্যবান ও জটিল আবিষ্কারগুলোকে পুনর্বার সযত্নে তুলে ধরে চিরন্তন শাশ্বত ও কালজয়ী ঐশীবাণীর অপ্রতিরোধ্য 'আলোর ঝল্ক' দিয়ে তাদের 'ভাবাবেগকে' দূর করার নিমিত্তে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস শুরু করেছি।
এছাড়া যারা শুধু কুরআন অধ্যয়ন করেন অথচ বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন নন, এ
বই তাদেরকেও ভারসাম্য জীবনের ইঙ্গিত প্রদান করবে। আবার বর্তমান সমাজের একটি বিরাট অংশই উদ্দেশ্যহীন জীবন যাপন করছেন। তারা না কুরআন অধ্যয়ন করেন আর না বিজ্ঞানের কাছে যান, তাদের কাছে গ্রন্থটি চমকপ্রদ মনে হবে।
যারা জীবনের অনেক চাওয়া-পাওয়াকে পরিত্যাগ করে 'সত্যকে' সমাজের বুকে জ্ঞান এবং যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে চান, সেই সৌভাগ্যবান মানুষদের জন্য বইটি নিত্যসঙ্গী এবং তাঁদের চলার পথে আলোর দিশারি হয়ে কাজ করবে।
যারা এখনো অবিশ্বাসী, তাদের জন্য বইটি জ্ঞান চক্ষু হিসেবে কাজ করবে। 'সত্য
এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার মতো অবস্থা ও জ্ঞান তারা লাভ করতে সমর্থ হবেন এই বই থেকে।
এছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও ভার্সিটির উদীয়মান জ্ঞান পিপাসু তরুণ ছাত্র ছাত্রীদের আগামী দিনগুলো প্রকৃত সত্যের সোনালী কিরণচ্ছটায় সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য বইটি তাদের ও নেহায়েত প্রয়োজন।
আমি পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী বা গবেষক নই, তবে বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সবসময়ই বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী ছিলাম। একজন বিশ্বাসী হিসেবে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের লক্ষ্যে বিগত প্রায় এক যুগের চেয়ে বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকের উপর যা কিছু সংগ্রহ করেছিলাম তাকে সম্বল করে আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে পথচলা শুরু করেছি। এ কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে যাদের কাছ থেকে যতটুকু সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছি, তাঁদের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে খাটো করতে চাই না। শুধু প্রার্থনা থাকলো দয়াময় আল্লাহ্ যেন তাদেরকে এর উত্তম বিনিময় উভয় জগতে দান করেন। 'কুরআন' ও 'বিজ্ঞান' উভয় বিষয়-ই জ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণের দাবি জানায়। এ কারণে সকল আলোচনাকেই জটিলতা, দুর্বোধ্যতা ও কাঠিন্য থেকে মুক্ত করে একেবারে সাদামাটা ও সহজ-সরল স্রোতে প্রবহমাণ রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষার অলংকারহীন প্রকাশ ও ছন্দহীন বর্ণনায় সুধী পাঠকের অধ্যয়ন আহত না হয়ে বরং সাদামাটা ও সহজ-সরল প্রকাশের ভেতর দিয়েই পাঠক সমাজ মূল উদ্দেশ্য লাভে যত্নবান হবেন- এটাই লেখক হিসেবে আমার প্রত্যাশা থাকবে।
বইটি গবেষণামূলক নয় বরং তুলনা ও বিচারমূলক। তবে অধ্যয়নের পর পাঠকের বিবেকের দ্বার নিজ থেকেই সত্য এবং মিথ্যার' গবেষণায় খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রকৃত সত্যকে সত্য জেনে আলিঙ্গন করার এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করার দায়িত্ব সম্মানিত পাঠকের উপরই থাকবে। এই বইয়ের প্রত্যেকটি অধ্যায়ই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আর সে কারণেই কোনো কোনো বিষয়ে আলোচনা বা তথ্য সম্মানিত পাঠকের বুঝার স্বার্থেই একাধিক বার পেশ করা হয়েছে। আশাকরি অধ্যায়ের পূর্ণতা বিধানের নিমিত্তে ঐ জাতীয় পুনরাবৃত্তি সুধী পাঠকের আগ্রহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। বিভিন্ন প্রকার সীমাবদ্ধতার কারণে ভুল-ত্রুটি থাকা খুবই স্বাভাবিক, যদি ত্রুটি
বিচ্যুতি দৃষ্টিগোচর হয়, তবে তা জানালে নিজকে ধন্য মনে করবো। পরিশেষে, আমাদের এই মহাবিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র বালিকণা থেকে শুরু করে বৃহৎ মহাজাগতিক জ্যোতিষ্কের সৃষ্টি, উদয়-অস্ত, এসবের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণসহ সকল কিছুর পেছনে যে অদৃশ্য মহান কর্ম-কৌশলী সক্রিয়, সেই চরম ও পরম ‘সত্তাকে’ জ্ঞানের মাপকাঠিতে যেন আমরা বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারি এবং তাঁরই সম্মুখে আমাদের শরীরের শ্রেষ্ঠ অংশ আপন ‘মস্তক’কে অবনত করে দিয়ে ধন্য হতে পারি, বইটিকে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার তৌফিক যেন তিনি দান করেন, এই প্রার্থনাই পেশ করছি। আমীন!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ