রোজার ফজিলত আরবি হাদিস

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব


হাদীস শরীফে রোযার অনেক সওয়াব বর্ণিত হইয়াছে। আল্লাহ্ তাআলার নিকট রোযার মর্তবা অতি বড়

রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি রমযান শরীফের রোযা ঈমানের সঙ্গে শুধু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি এবং আখেরাতের সওয়াব লাভের আশায় রাখিবে, তাহার পূর্ববর্তী সমস্ত (ছগীরা) গোনাহ্ মাফ হইয়া যাইবে।

হাদীস শরীফে আছে: রোযাদারের মুখের বদবু আল্লাহ্ নিকট মেশকের খোশবু অপেক্ষা অধিক প্রিয়। কিয়ামতের দিন রোযার অসীম সওয়াব পাইবে।

হাদীস শরীফে আছেঃ কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোক যখন হিসাব-নিকাশের কঠোরতায় আবদ্ধ থাকিবে, তখন রোযাদারের জন্য আরশের ছায়ায় দস্তরখান বিছান হইবে। তাহারা সানন্দে পানাহার করিতে থাকিবে তখন অন্যান্য লোক আশ্চর্যান্বিত হইয়া বলিবে, এ কি ব্যাপার! তাহারা সানন্দে পানাহার করিতেছে, আর আমরা এখনও হিসাবের দায়ে আবদ্ধ আছি। উত্তরে বলা হইবেঃ দুনিয়াতে তোমরা সানন্দে পানাহার করিয়াছিলে, তখন তাহারা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে রোযা রাখিয়া ক্ষুৎপিপাসার যন্ত্রণা সহ্য করিয়াছিল।

রোযা ইসলামের বড় একটি রোকন। যে রোযা না রাখিবে, সে মহাপাপী হইবে এবং তাহার ঈমান কমজোর হইয়া যাইবে।

১। মাসআলাঃ রমযান শরীফের রোযা পাগল ও নাবালেগ ব্যতীত (স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, অন্ধ, বধির, শ্রমিক) সকলের উপর ফরয। শরীঅতে বর্ণিত ওযর ব্যতীত রমযান শরীফের রোযা না রাখা কাহারও জন্য দুরুস্ত নহে। এইরূপে যদি কেহ রোযার মান্নত মানে, তবে সে রোযাও তাহার উপর ফরয হইয়া যায়, ক্বাযা ও কাফ্‌ফ্ফারার রোযাও ফরয। এতদ্ব্যতীত অন্য যত রোযা আছে, তাহা নফল। নফল রোযা রাখাতে সওয়াব আছে, কিন্তু না রাখিলে গোনাহ্ নাই। দুই ঈদের দুই দিন এবং বকরা ঈদের পরে তিন দিন এই পঁাচ দিন রোযা রাখা হারাম।

২। মাসআলা: ছোব্‌হে ছাদেক হইতে সূর্যাস্ত রোযার নিয়্যতে পানাহার ও সহবাস হইতে বিরত থাকাকে শরীঅতের ভাষায় ‘রোযা” বলে।

৩। মাসআলা : রোযার জন্য যেমন পান ও আহার পরিত্যাগ করা ফরয, তেমনই নিয়াত করাও ফরয়; কিন্তু নিয়াত মুখে পড়া ফরয নহে, শুধু যদি মনে মনে চিন্তা করিয়া সঙ্কল্প করে যে, আমি আজ আল্লাহ্র নামে রোযা রাখিব এবং কিছু পানাহার বা স্ত্রী ব্যবহার করিব না, তবে তাহাতেই রোযা হইয়া যাইবে। কিন্তু যদি কেহ মনের চিন্তা এবং সঙ্কল্পের সঙ্গে মুখে ও বাংলায় বা আরবীতে নিয়্যত পড়িয়া লয় যে, আমি আল্লাহর নামে রোযা রাখার নিয়্যত করিতেছি’ তবে তাহাও ভাল। 

৪। মাসআলা যদি কেহ সারা দিন কিছু পানাহার না করে—হয়ত ক্ষুধাই লাগে নাই, বা অন্য কোন কারণে খাওয়ার সুযোগ হয় নাই, তাহার রোযা হইবে না; অবশ্য যদি রোযা রাখার ধারণা হইত, তবে রোযা হইয়া যাইত।

৫। মাসআলাঃ শরীঅত অনুসারে ছোবৃহে ছাদেক হইতে রোযা শুরু হয়, কাজেই ছোব্‌হে ছাদেক না হওয়া পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী ব্যবহার ইত্যাদি সব জায়েয আছে। অনেকে শেষরাত্রে সেহরী খাওয়ার পর এবং রোযার নিয়্যত করিয়া লওয়ার পর রাত্রি থাকা সত্ত্বেও কিছু খাওয়া দাওয়া বা স্ত্রী ব্যবহার করাকে না-জায়েয মনে করে, তাহা ভুল। ছোবৃহে ছাদেক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব জায়েয আছে, নিয়্যত করুক বা না করুক। তবে ছোবৃহে ছাদেক হইয়া যাওয়ার সন্দেহ হইলে এইসব না করাই উচিত।



রমযান শরীফের রোযা

১। মাসআলঃ যদি রাত্র হইতে রমযানের রোযার নিয়্যত করে, তবুও ফরয আদায় হইয়া যায়। যদি রাত্রে রোযা রাখার নিয়্যত ছিল না বরং ভোর হইয়া গেল, তবুও এই খেয়ালেই রহিল যে, আজ রোযা রাখিব না। অতঃপর বেলা বাড়িলে খেয়াল হইলে যে, ফরয রোযা ছাড়িয়া দেওয়া অন্যায়। তাই এখন রোযার নিয়্যত করিল, তবুও রোযা হইয়া যাইবে। কিন্তু যদি সকালে কিছু পানাহার করিয়া থাকে, তবে এখন আর নিয়্যত করিতে পারে না।

২। মাসআলঃ যদি কিছু পানাহার না করিয়া থাকে, তবে দিনের দ্বীপ্রহরের ১ ঘন্টা আগে পর্যন্ত রমযানের রোযার নিয়্যত করা দুরুস্ত আছে। 

৩। মাসআল রমযান শরীফে যদি খাছ করিয়া রমযান শরীফের রোযা বা ফরয রোযা বলিয়া নিয়াত না-ও করে, শুধু এতটুকু নিয়্যত করে যে, আজ আমি রোযা রাখিব, অথবা রাত্রে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোযা রাখিব, তবে তাহাতেই রমযানের রোযা হুহীহ্হ ইয়া যাইবে।

৪। মাসআলঃ যদি কেহ রমযান শরীফে রমযানের রোযা না রাখিয়া নফল রোযা রাখার নিয়্যত কবে এবং মনে করে যে, নফল রোযা এখন রাখিয়া লই, রমযানের রোযা পরে ক্বাযা করিয়া লইব, তবুও তাহার রমযানের ফরয রোযা আদায় হইয়া যাইবে, নফল হইবে না।

৫। মাসআলঃ গত রমযানের রোযা কোন কারণে ছুটিয়া গিয়াছিল, সারা বৎসরে কাযা রোযা রাখে নাই, এখন রমযানের মাস আসিয়া পড়িয়াছে; যদি এই রমযানে গত রমযানের ক্বাযা রোযার নিয়্যত করে; তবুও এই রমযানের রোযাই হইবে, গত রমযানের ক্বাযা রোযা হইবে না, সে রোযা রমযানের পর ক্বাযা করিবে।

৬। মাসআলঃ কেহ নযর (মান্নত) মানিয়াছিল যে, আমার অমুক কাজ হইয়া গেলে আমি আল্লাহ্র নামে দুইটি বা একটি রোযা থাকিব, তারপর তাহার সে মকছুদও পূর্ণ হইয়াছে, কিন্তু মান্নতের রোযা রাখে নাই। যখন রমযান আসিয়াছে, তখন ঐ রোযা রাখিতে ইচ্ছা করিল। তখন যদি মান্নতের রোযার নিয়্যত করে, রমযানের রোযার নিয়্যত না করে, তবুও রমযানের রোযাই আদায় হইবে, মান্নতের রোযা আদায় হইবে না, মান্নতের রোযা রমযানের পর রাখিতে হইবে। ফলকথা, রমযান মাসে যে কোন রোযারই নিয়্যত করুক না কেন, তাহা রমযানের রোযাই হইবে, রমযান মাসে অন্য কোন রোযা ছহীহ্ হইবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ