কোরবানির নিয়ম

কোরবানির নিয়ম


যাহার উপর ছদকাতুল ফিত্র ওয়াজিব অর্থাৎ ফিত্রা ওয়াজিব তাহার উপর ক্বোরবানীও ওয়াজিব। ক্বোরবানী করিতে সমর্থ হইয়া উহা না করিলে মহাপাপী হইবে। গরু, ছাগল, দুম্বা, উট, মহিষ ও ভেড়া ইত্যাদি দ্বারা কোরবানী করা দুরস্ত আছে।

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা একজনের জন্য একটি এবং গরু, মহিষ ও উট এক একটি সাত জনের জন্য কোরবানী করিতে পারা যায়। কোরবানীর জানওয়ার  দোষ-ত্রুটিহীন হইতে হইবে। চোখ কানা, অন্ধ, খোড়া, কান কাটা, লেজ কাটা, শিং ভাঙ্গা অত্যন্ত দুর্বল ও দাতহীন ইত্যাদি দোষযুক্ত পশুর দ্বারা ক্বোরবানী দুরস্ত নাই।

ক্বোরবানীর গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বৎসর, ছাগলের বয়স কমপক্ষে এক বৎসর, দুম্বার বয়স কমপক্ষে ছয়মাস এবং উটের বয়স কমপক্ষে পঁাচ বৎসর হইতে হইবে।

কোরবানী নিজের তরফ হইতে এবং স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার তরফ হইতে দেওয়া যাইতে পারে। পরহেজগার ধার্মিক মুসলমান সমর্থ হইলে নবীয়ে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের তরফ হইতে ক্বোরবানী দেওয়া দরকার। যদি কেহ গরু দিয়া ক্বোরবানী করে, তবে নবীয়ে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামের তরফ হইতে উহার এক শরীক দেওয়া যাইতে পারে অথবা আর্থিক সুবিধা থাকিলে পৃথক ছাগল দিয়াও দেওয়া যাইতে পারে। আপন মৃত পিতা-মাতা অথবা যে কোন ছাহাবায়ে কেরাম এবং অলিআল্লাহ্র তরফ হইতেও ক্বোরবানী দেওয়া যাইতে পারে।

কোরবানীর জন্তু নিজে জবেহ করা উত্তম। যদি নিজে জবেহ না করে, তবে অন্যের দ্বারা জবেহ করিবার সময় তথায় হাজির থাকিতে হইবে।

কোরবানীর জন্তু জবেহ করার সময় প্রথমে নীচের দোয়াটি পড়িতে হয়।

إن ملوتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العلمين- لا شريك له وبذالك أمرت وانا اول المسلمين  اللـهـم منك ولكه

বাঃ উঃ— ইন্না ছালাতী ওয়া নুছুকী ওয়া মাহ্‌ইয়াইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহে রাব্বিল আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউয়্যালুল্ মুসলেমীন্। আল্লাহুম্মা মিকা ওয়া লাক্। 

অর্থ:― নিশ্চয়ই আমার নামাজ ও আমার ক্বোরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মৃত্যু নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ্ তায়ালার জন্য। তাহার কোন অংশীদার নাই এবং এই বিশ্বাস পোষণ করিতে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং আমি সর্বপ্রথম মুসলমান হইলাম। হে আল্লাহ্! তোমার পক্ষ হইতে এবং তোমারই জন্য।

এই দোয়া পাঠের পরেই ‘বিছমিল্লাহি আল্লাহু আকবর' বলিয়া জবেহ করিবে। যাহারা গরু ধরিবে তাহাদেরও জবেহের সময় ‘বিছমিল্লাহি আল্লাহু আক্বর' বলা দরকার। জবেহের পরে নিম্নলিখিতভাবে মুনাজাত করিবে।

মুনাজাত – ইয়া আল্লাহ্ তায়ালা! এই কোরবানী তোমার ওয়াস্তে দিলাম। ইয়া আল্লাহ্ তায়ালা আমার তরফ হইতে (যত জনের তরফ হইতে কোরবানী দিবে, তাহাদের সকলের নাম বলিবে) কবুল কর, যেভাবে তুমি তোমার হাবীব মোহাম্মদ মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরফ হইতে কবুল করিয়াছ এবং হযরত ইব্রাহিম আলাইহিছ্‌ছালাম হইতে করিয়াছ। তারপর দরূদ শরীফ পড়িয়া মুনাজাত শেষ করিবে। দোয়া জানা না থাকিলে শুধু “বিছমিল্লাহি আল্লাহু আক্বর” বলিয়া জবেহ করিবে। তারপর মুনাজাত করিবে।

কয়েকজনে শরীক হইয়া কোরবানী করিলে প্রত্যেকে হাড়-মাংস ইত্যাদি ওজন করিয়া লইবে। নতুবা কোরবানী শুদ্ধ হইবে না।

জীবিত ব্যক্তির তরফ হইতে কেহ কোরবানী দিলে ঐ ব্যক্তির অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।

ক্বোরবানীর জানওয়ারের গোশ্ট তিন ভাগ করিয়া এক ভাগ আত্মীয় স্বজনকে, এক ভাগ ফকীর মিছ্‌কীনকে এবং এক ভাগ নিজে রাখিবে। ক্বোরবানী দাতা ইচ্ছা করিলে সম্পূর্ণ গোশত দান করিয়া দিতে পারে।

ক্বোরবানীর জানওয়ারের চামড়া বিক্রি করিয়া ঐ টাকা গরীব আত্মীয়-স্বজনকে দিয়া দিবে। নিজে ঐ টাকা খরচ করিতে পারিবে না। ১০ই জিলহজ্ব তারিখে ক্বোরবানী করা উত্তম। ১১ অথবা ১২ তারিখ সূর্য্যাস্তের পূর্বেও ক্বোরবানী করা যায়।

বালেগ বা নাবালেগ ছেলে মেয়ে মালেকে নিছাব না হইলে তাহাদের ক্বোরবানী দেওয়া ওয়াজেব নহে। অবশ্য পিতা মাতা সম্পদশালী হইলে তাহাদের ক্বোরবানী দিলে ছওয়াব হইবে।

জবেহ করিবার নিয়মঃ

জবেহ করিবার সময় প্রাণীর মাথা জবেহকারীর বাম হাতের দিকে এবং উহার দেহ ডান হাতের দিকে রাখিতে হইবে। জবেহকারীর অযু করিয়া লওয়া সুন্নত। জবেহ করিবার সময় মাথায় টুপী রাখিবে এবং ক্বেলামুখী হইয়া “বিছ্‌মিল্লাহে আল্লাহু আকবর” বলিয়া জবেহ করিবে। যাহারা প্রাণী ধরিবে তাহারাও 'বিছমিল্লাহে আল্লাহু আকবর” বলিবে। জবেহ করিবার পর প্রাণী ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য প্রাণীর গলায় ছুরি দিয়া খোচানো মুক্রূহে তাহ্রীমা। প্রাণী ঠাণ্ডা হওয়ার পূর্বে চামড়া ছাড়ানো এবং জবেহর সময় মাথা ধড় হইতে পৃথক করিয়া ফেলা মরূহ। বিনা কারণে অন্ধকারে জবেহ করা মকরূহ এবং পুরুষ উপস্থিত থাকিতে স্ত্রীলোকের জবেহ করাও মকরূহ।

জবেহের সময় পশুর গলার চারিটি নালী যথা ঃ— হলকুম অর্থাৎ শ্বাস প্রশ্বাসের নালী, মরী অর্থাৎ খাদ্য নালী এবং গলার দুই দিকের দুইটি রক্তবাহী শিরা গলার উপরিভাগে এবং চোয়ালের নীচে কাটিয়া দিতে হইবে। এই চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি কাটা গেলেও জবেহ হইয়া যাইবে। দুইট কাটিলে জবেহ শুদ্ধ হইবে না।

জবেহকারী সজ্ঞান, মুসলমান হইতে হইবে এবং জবেহের নিয়ম কানুন সম্বন্ধে জ্ঞান রাখিতে হইবে; নতুবা জবেহ শুদ্ধ হইবে না। আল্লাহ্ তায়ালার নাম ছাড়া অন্য কাহারও নামে জবেহ করিলে অথবা ইচ্ছা করিয়া আল্লাহ্ তায়ালার নাম না লইয়া জবেহ করিলে ঐ প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েজ হইবে না। ভুলে আল্লাহ্ তায়ালার নাম না লইয়া থাকিলে ঐ প্রাণীর গোশত খাওয়া দোরস্ত হইবে। জবেহকৃত প্রাণীর নিম্নলিখিত জিনিসগুলি খাওয়া হারাম। যথাঃ- ১। জবেহকৃত প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত, ২। মাংসের উপর পৃথক সাদা পরদা, ৩। পিঠের হাড়ের মধ্যস্থিত সাদা শ্বাস, ৪। মূত্র নালী, ৫। অণ্ডকোেষ ৬। লিঙ্গ, ৭। মলদ্বার ও ৮। পিত্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ