কোরআন হাদিসের আলোকে রমজানের ফজিলত

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রোযা তিন প্রকার। যথা:- 

   ১। ফরয, 

   ২। ওয়াজিব,

   ৩। নফল। 

পবিত্র রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। মানতের রোযা ও কাফ্‌ফারার রোযা ওয়াজিব। ইহা ছাড়া বাকী যত রোযা আছে সবই নফল রোযা বলিয়া গণ্য হইবে। নফল রোযা রাখিলে অসীম ছওয়াব লাভ করা যায় এবং অসংখ্য গুনাহ্ মাফ হয়। সুতরাং নিম্নলিখিত মাসের কোন্ কোন্ তারিখে রোযা রাখিলে কি পরিমাণ পুণ্য লাভ ও গুনাহ্ মাফ হয়, তাহা দেওয়া হইল।

মহরম মাসের নফল রোযা – পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, রমযানের পর মহরম মাসের রোযা সমস্ত রোযা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। মহরমের প্রথম দশ দিন রোযা রাখিবার জন্য বেশ তাকিদ আছে। যদি কোন কারণ বশতঃ প্রথম দশদিন রোযা রাখিতে পারা না যায়, তবে এই চঁাদের নয় তারিখ ও দশ তারিখ অথবা দশ ও এগার তারিখ অবশ্যই রোযা রাখা উচিত।

মহরমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এই আশুরার দিনে যে ব্যক্তি রোযা রাখিবে, সে দশ হাজার ফেরেস্তার, দশ হাজার শহীদের ও দশ হাজার হাজীদের ছওয়াব পাইবে এবং ষাট বৎসর রোযা নামাজ পড়ার সমতুল্য ছওয়াব পাইবে এবং এক বৎসরের নফল রোযার ছওয়াব পাইবে।

আরও হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, ঐ আশুরার দিন রোযা রাখিলে এক বৎসর পূর্বেকার গুনাহ্ মাফ হইবে। চল্লিশ বৎসরের গুনাহের কাফ্‌ফ্ফারা হইবে এবং পরিবারের ফরাগতি অবস্থা হইবে।

আরও বর্ণিত আছে, মহরম মাসের একটি রোযার পরিবর্তে ত্রিশদিন রোযা রাখার সমান ছওয়াব পাইবে। বৎসরের মধ্যে চারিটি মাসকে হারাম মাস বলে। হারাম মাস বলিতে মহরম, রজব, জিলক্ব'দ্ ও জিলহজ্জ মাস সমূহকে বুঝায়। এই চারি মাসে নফল রোযা, তিলাওয়াতে কোরান, যিক আযকার, দোয়া-দরূদ ইত্যাদি ইবাদত অন্যান্য মাস অপেক্ষা উৎকৃষ্ট।

রজব মাসের নফল রোযা – রজব চঁাদের প্রথম দিনের রোযা তিন বৎসরের গুনাহের কাফ্‌ফ্ফারা, দ্বিতীয় দিনের রোযা দুই বৎসরের গুনাহের তৃতীয় দিনের রোযা এক বৎসরের গুনাহের কাফ্‌ফ্ফারা হয়। হর কাফ্ফারা এবং

রজব মাসের ছাব্বিশ তারিখ দিনগত রাত্রিকে শবে মে'রাজের রাত্রি বলা হয় এবং তারপরের দিন সাতাইশ তারিখকে শবে মে’রাজের দিন বলা হয়। এই সাতাইশ তারিখের দিন রোযা রাখিলে কখনও তাহার শরীর দোযখের আগুনে

জ্বলিবে না এবং সে একশত বৎসরের রোযার ছওয়াব পাইবে। অন্যত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, যদি রজব মাসে একটি রোযাও রাখা যায় তাহা হইলে তাহার কবরের আযাব হইবে না।

শা'বান মাসের নফল রোযা – পবিত্র হাদীছ শরীফে শা'বান মাসের তের, চৌদ্দ ও পনর তারিখ রোযা রাখিবার জন্য তাকিদ আছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি শা'বান মাসে তিনটি রোযা রাখিবে, তাহার সমস্ত গুনাহ্ মাফ হইবে।

আরও একটি হাদীছ শরীফে আছে, ঐ তিনটি রোযা রাখিয়া ইক্তারের সময় তিনবার দরূদ শরীফ পড়িয়া ইক্তার করিলে গত জীবনের সমস্ত গুনাহ্ মাফ হইয়া যাইবে এবং রিষ্কি ফরাগত হইবে।

হাদীছ শরীফে আরও আছে, যে ব্যক্তি শা'বান মাসে তিনটি রোযা রাখিবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তায়ালা তাহাকে বেহেশতের উট হইতে একটি উটের পিঠে ছওয়ার করাইয়া কবর হইতে উঠাইবেন।

হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি শা'বান মাসের পনর তারিখে রোযা রাখিবে, তাহাকে কখনও দোযখের আগুন স্পর্শ করিবে না। 


পবিত্র রমযান মাসের ফরয রোযা

সম্পূর্ণ রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। ছেলেমেয়ে বালেগ হইলে রোযা ফরয হয়। ছোব্‌হে ছাদেক হইতে সূৰ্য্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী মিলন হইতে বিরত থাকাই রোযা। যদি কেহ ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি রোযাও ভঙ্গ করে, তাহা হইলে তাহাকে একটি রোযার পরিবর্তে একাধিকক্রমে ষাটটি রোযা কাফ্‌ফ্ফারা দিতে হইবে। ইহা করিতে অক্ষম হইলে ৬০ জন মিছকীনকে দুইবেলা আহার করাইতে হইবে। অথবা একজন মিছকীনকে ৬০ দিন দুই বেলা আহার করাইতে হইবে। আহার করাইতে না পারিলে ৬০ জন মিছকীনের প্রত্যেককে ছক্কায়ে ফেত্রা পরিমাণ এক সের সাড়ে বার ছটাক গম অথবা উহার মূল্য প্রদান করিলে কাফ্‌ফ্ফারা আদায় হইবে। কিন্তু একজন মিছকীনকে ৬০ দিনের দুই বেলার খাদ্য একদিনে দিলে তাহাতে কাফ্‌ফ্ফারা আদায় হইবে না।

বৃদ্ধাবস্থায় শক্তিহীন হইয়া পড়িলে এবং শক্তি ফিরিয়া পাওয়ার আশা না থাকিলে রোযা না রাখিয়া প্রতি দিন রোযার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করিলে চলিবে। প্রতি রোযার পরিবর্তে একসের সাড়ে বার ছটাক গম অথবা তাহার মূল্য মিছকীনকে দেওয়ার নাম ফিদিয়া। এক রোযার ফিদিয়া একজন মিছকীনকে অথবা কয়েকজন মিছকীনকে দেওয়া যাইতে পারে।

কোন বৃদ্ধ অথবা রুগ্নব্যক্তি রমযান মাসে ফিদিয়া আদায় করিল; কিন্তু রমযান মাসের পরে বৃদ্ধ ও রুগ্নব্যক্তি রোযা রাখার মত শক্তি ফিরিয়া পাইল, এই অবস্থায় তাহার যেই রোযাগুলি রাখিতে পারে নাই ঐ সবগুলিই ক্বাজা করিতে হইবে এবং ঐ রোযাগুলির জন্য ফিদিয়া হিসাবে যাহা কিছু মিছকীনকে প্রদান করিয়াছিল, তাহা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হইবে এবং পৃথক ভাবে উহার ছওয়াব লাভ করিবে।

রমযান মাসের রোযা রাখিবার জন্য শেষ রাত্রিতে যে আহার করা হয়, তাহাকে ছেহ্রী বলা হয় এবং সূর্যাস্তের পরে কোন কিছু খাওয়াকে ইতার বলে। যে জিনিস দ্বারা রোযা খোলা হয়, তাহাকে ইফ্ফ্ফারী বলে।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, পানি অথবা খুরমা দিয়া ইফ্ফ্তার করা উত্তম। হালাল রুজী দ্বারা ইফতার করিতে হইবে এবং তাহাও বেশী খাইবে না। প্রত্যহ একই পরিমাণ খাইবে। সর্ব্বদা মনকে ভয় ও ভরসার মধ্যে রাখিবে।

প্রতিদিন ছেহরীর পরে পানি দ্বারা ভাল মতে কুলি করিয়া পরের দিনের রোযার নিয়ত করিতে হয়। স্মরণ রাখিতে হইবে যে, প্রত্যেক দিন নিয়ত করা ফরয। যদি কোনদিন ভুলক্রমে রাত্রিতে নিয়ত করা না যায়, তবে পরের দিন দুপুরের পূর্বে নিয়ত করিলেও চলিবে।


রোযার নিয়ত

উচ্চারণ- নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।

যদি দিনের বেলায় দুপুরের পূর্বে নিয়ত করিতে হয়, তবে (অছুমা গাদাম) এর পরিবর্তে  (আছুমাল্ ইয়াওমা) পড়িতে হইবে।


রোযার নিয়ত আরবী ভাষায় না জানিলে বাংলা ভাষায়ও করিতে পারা যায়। যথাঃ

“ইয়া আল্লাহ্ তায়ালা! আমি আগামী দিন রমযান মাসের ফরয রোযা রাখিবার নিয়ত করিলাম। ইয়া আল্লাহ্ তায়ালা! তুমি আমা হতে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি মহাশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী”। এই নিয়ত না জানিলে শুধু বলিবেঃ— “ইয়া আল্লাহ্ তায়া'লা! আমি আগামী দিন রমযান মাসের রোযা রাখিবার নিয়ত করিলাম। ইয়া আল্লাহ্ তায়ালা তুমি আমার রোযা কবুল কর।” এই পর্য্যন্ত বলিলেই রোযা শুদ্ধ হইবে।


ইফতারের দোয়া

আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)


রোযার মধ্যে ২টি ফরয, যথাঃ—

 (১) চাঁদ দেখিয়া রোযা রাখা

 (২) রোযার নিয়ত করা।



রোযার সুন্নত

(১) শেষ রাত্রে ছেরী খাওয়া। 

(২) সূর্য্যাস্তের সাথে সাথে ইতার করা। 

(৩) রাত্রে তারাবীহের নামাজ পড়া। 

(৪) কোরান শরীফ তিলাওয়াত করা। 

(৫) শেষ দশ রাত্রে মজিদে ই'তেক্বাফ করা। 

(৬) ক্ষুধার্ত ও দরিদ্রকে দান করা।


কি কারনে রোযা রাখা যায় না

নিম্নলিখিত কারণ সমূহের যে কোন কারণে রমযান মাসের রোযা না রাখা যায় অথবা রাখিয়া থাকিলে ভঙ্গ করা যায়। কিন্তু রমযান মাসের পরে নিশ্চয়ই উহার কাজা আদায় করিতে হইবে। একটি রোযার পরিবর্তে একটি রোযা আদায় করাকে কাজা বলে।

(১) পীড়িত ব্যক্তির পীড়া বৃদ্ধির আশংকা হইলে। 

(২) হঠাৎ রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িলে। 

(৩) শক্তিহীন বৃদ্ধ হইলে। 

(৪) গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভ নষ্টের আশংকা হইলে। 

(৫) স্ত্রীলোকের হায়েয নিফাছ হইলে। 

(৬) শিশুর স্তন্য দানের জন্য দুগ্ধের অভাব হইলে। 

(৭) প্রাণনাশের আশংকাজনক ক্ষুধা বা পিপাসা হইলে। 

(৮) হঠাৎ পেট বেদনা হইলে। 

(৯) সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করিলে। 

(১০) ছফরে অথবা বিদেশে গেলে।

বিদেশে মোসাফেরী অবস্থায় রোযা না রাখিতে পারা যায় তবে কোনরূপ কষ্ট বা অসুবিধা না হইলে রোযা রাখাই উত্তম। 


কি কি কারণে রোযা নষ্ট হয়ে যাযঃ

নিম্নলিখিত কারণ সমূহে রোযা ভঙ্গ হইয়া যায়, পরে সেই রোযার শুধু ক্বাজা আদায় করিতে হয়, কাফ্‌ফ্ফারা দিতে হয় না।

(১) কুলি করার সময় হঠাৎ পেটে পানি ঢুকিয়া গেলে। 

(২) পায়খানা কিম্বা - প্রস্রাবের রাস্তায় পিচকারী করাইলে। 

(৩) নিদ্রিতাবস্থায় কেহ কোন কিছু ভক্ষণ করাইয়া দিলে। 

(৪) পেটে কিম্বা মাথার ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগাইলে, তাহা পেটের ভিতর অথবা মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করিলে। 

(৫) কানে কোন তরল ঔষধ প্রয়োগ করায় তাহা ভিতরে গেলে। 

(৬) নাকের ছিদ্র পথে কোন জিনিষ পেটে প্রবেশ করিলে। 

(৭) হাত ও জিহ্বা দ্বারা চানাবুট পরিমাণ কোন কিছু দাতের ফাক হইতে বাহির করিয়া খাইলে। 

(৮) মুখ ভরিয়া বমি আসার পর অনিচ্ছায় উহা আবার পেটে গেলে! 

(৯) সামান্য বমি মুখে আসার পর ইচ্ছা পূর্ব্বক তাহা গিলিয়া ফেলিলে। 

(১০) ভুলক্রমে কোন কিছু পানাহার করিলে রোযা অবশ্য ভঙ্গ হয় না; কিন্তু পানাহারে রোযা ভঙ্গ হইয়া গিয়াছে মনে করিয়া পুনঃ কোন কিছু পানাহার করিলে রোযা ভঙ্গ হইয়া যায়। এই রোযার ক্বাজা করিতে হইবে। 

(১১) রাত্রি বাকী আছে মনে করিয়া ছোব্‌হে ছাদেকের পর ছেহেরি খাইলে অথবা সূৰ্য্য ডুবিয়া গিয়াছে মনে করিয়া সূর্যাস্তের পূর্বে ইতার করিলে রোযা ভঙ্গ হয়। 

(১২) রোযার নিয়ত ছাড়া রোযা রাখিয়া ইচ্ছা পূর্বক ভঙ্গ করিলে।


মহাতে রোযা

যে সব কাজের দরূণ রোযা মরূহ হয়, সেই গুলিকে মহাতে রোযা

বলে। নিম্নলিখিত কাজে রোযা মরূহ্ হয় –

১। বিনা ওযরে কোন জিনিষ মুখে দিয়া চিবান।

২। গরমের কারণে বার বার কুলি করা।

৩। টুথ্ পাউডার, পেষ্ট, কয়লা অথবা অন্য কোন মাজন দ্বারা দিনের বেলায় দাত পরিষ্কার করা।


কি কি করলে রোযা নষ্ট হয় নাঃ-

(১) রোযা রাখা অবস্থায় সুরমা লাগান কিম্বা কোন সুগন্ধি দ্রব্যের ঘ্রান লওয়া জায়েয আছে।

(২) আতর গোলাপের খুশবু বা কোন ফুলের ঘ্রাণ লইলে রোযার কোন ক্ষতি হইবে না।

(৩) থুথু গিলিয়া ফেলিলে রোযা ভঙ্গ হয় না।

(৪) রোযা রাখা অবস্থায় ইন্‌জেক্‌শান দিতে পারা যায় না। দিলে রোযা ভঙ্গ হইয়া যাইবে।

(৫) তৈল ব্যবহার করিলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।

পবিত্র কোরান শরীফ রমযান মাসে নাযিল হইয়াছে। তাই এই সারা মাসে কোরান শরীফ তেলাওয়াত করা অতীব ছওয়াবের কাজ। যত বেশী কোরান শরীফ খতম করা যায়, ততই উত্তম। বেশী না পারিলে কমপক্ষে একবার হইলেও সম্পূর্ণ কোরান শরীফ খতম করা উচিত। এতদ্ব্যতীত দোয়া, দরূদ, যিক্র-আযকার, নফল নামাজ ইত্যাদি ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখিবে। রোযা রাখিয়া মিথ্যা কথা বলিবে না, পরের নিন্দা করিবেনা, কাহারও বিরুদ্ধে কথা লাগাইবেনা, মিথ্যা শপথ করিবে না ও কামভাবে দর্শন করিবে না। কারণ এই পাচটি কাজে রোযা নষ্ট হইয়া যায়। ইহা হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে।


এতেক্বাফ কি...?

এবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়ত করিয়া মজিদে অবস্থান করাকে এ'তেকাফ বলা হয়। রমযান মাসের শেষ দশদিন এ'তেকাফ করা সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ কেফায়াহ্। হযরত নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম রমযান মাসের শেষ দশদিন এ'তেকাফ করিতেন। কোন মহল্লার একজন এতেকাফ করিলে সকলের তরফ হইতে আদায় হইয়া যাইবে। কিন্তু কেহই যদি এতেকাফ না করে তাহা হইলে সকলেই ইহার জন্য গুনাহ্গার হইবে। যে কোন মজিদে এতেকাফ করা যায়। পুরুষেরা মজিদে এ'তেকাফ করিতে হইবে। কিন্তু মেয়েলোকের জন্য মজিদে এ’তেকাফ জায়েজ নহে। তাহারা গৃহের মধ্যে ইবাদতের স্থান নির্দিষ্ট করিয়া অর্থাৎ হুজরা বানাইয়া এ'তেকাফ করিতে পারিবে। রমযান মাসের ২০ তারিখ আছরের নামাজের পরে এ'তেক্কাফের নিয়ত করিয়া মজিদে প্রবেশ করিতে হয়। আছরের জমাতের পর মজিদ হইতে আর বাহির না হইয়া এ'তেকাফের নিয়ত করাই উত্তম। ২০ তারিখ সূর্য্যাস্তের পর মসজিদে ঢুকিলে সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ আদায় হইবে না। রমযান মাস ৩০শা হইলে ৩০ তারিখ সূর্যাস্তের পর মজিদ হইতে বাহির হইবে। যদি ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাদ উঠে তাহা হইলে চাঁদ উঠার পর বাহির হইবে। রমযান মাসের শেষ ১০ দিন এতেকাফের জন্য রোযাও থাকিতে হইবে। কোন অসুস্থ ব্যক্তি অথবা মোছাফের রোযা না থাকিয়া এই দশদিন এ’তেকাফ করিলে সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ আদায় হইবে না বরং নফল হইবে। পায়খানা, প্রস্রাব, অযু এবং গোসলের (প্রয়োজন হইলে) সময় ব্যতীত অন্য কোন দরকারে মজিদ হইতে বাহির হওয়া নিষেধ। এই সব কারণে বাহির হইলেও কাহারও সহিত কথা বলিতে পারিবেনা। কাজ সমাধা করিয়া সত্তর মজিদে চলিয়া আসিতে হইবে। বিনা ওজরে এক মিনিট মসৃজিদের বাহিরে থাকিলেও এতেকাফ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। এ'তেকাফ অবস্থায় কাহারও সহিত গল্পালাপ করিতে পারিবে না। এ'তেকাফকারী ইবাদতের নিয়তে চুপ করিয়া থাকা মরূহ্। এ'তেকাফ অবস্থায় কোরান তেলাওয়াত, দোয়া, দরূদ, এস্তেগফার, নফল নামাজ, মোরাকাবা ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। এ'তেকাফ অবস্থায় মজিদে খাওয়া দাওয়া করিবে। বাহিরে খাওয়া-দাওয়া করিলে এ'তেক্কাফ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। কেহ যদি রমযানের ২৬ তারিখ আছরের পর এ'তেকাফের নিয়তে মজিদে প্রবেশ করে এবং ঈদের চঁাদ উঠার পর বাহির হয় তাহা হইলে উহা নফল হইবে। সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ আদায় হইবে না।

শওয়াল মাসের নফল রোযা- পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখিয়া অতঃপর শওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে যেন সারাটি বৎসর রোযা রাখি।।

আরও হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখে, আল্লাহ্ তায়ালা তাহার আমল নামায় প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে এক হাজার রোযার ছওয়াব লিখিবেন।

আরও হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি শওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখে, আল্লাহ্ তায়ালা তাহার উপর দোযখের আগুন হারাম করেন। শওয়াল মাসের ছয়টি রোযার ফযীলত ও ছওয়াব সম্বন্ধে এই রকম আরও বহু হাদীছ শরীফ আছে। এই ছয়টি রোযা মাসের যে কোন দিন রাখিলে চলিবে। এক সঙ্গেও ছয়টি রোযা রাখা যায়। অথবা মাঝে মাঝে ফাক দিয়াও রাখা যায়। চঁাদের প্রথম ভাগে রাখিলে অধিক ছওয়াব হয়।


জিল্হজ্জ মাসের নফল রোযা – 

জিল্হজ্জ মাসের প্রথম নয়দিন রোযা রাখার জন্য যথেষ্ট তাকিদ আছে। যদি কোন কারণবশতঃ প্রথম নয়দিন রোযা রাখিতে পারা না যায়, তবে আট ও নয় তারিখ রোযা রাখা দরকার।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে— ইয়াওমে তারাবীয়াতে যে ব্যক্তি রোযা রাখে, সে যেন বার্ হাজার বৎসর আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত করিল।


আল্লাহ হাফেজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ